স্টাফ রিপোর্টার: সাভারের মজিদপুর এলাকায় নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন মো. আব্দুস সাত্তার (৫৬)। এই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে তার মেয়ে জান্নাতুল জাহান শিফা (২৩) এর বিরুদ্ধে। নিহতের বড় ছেলে মো. হাসিবুর রহমান অভিযোগ করেন, অনৈতিক ও সমকামী সম্পর্ক দেখে ফেলায় এবং এতে বাধা দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তার বাবাকে খুন করা হয়েছে। আব্দুস সাত্তার নাটোর জেলার সিংড়া থানার ভোগা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
হাসিবুর রহমান জানান, “আমার বাবা অত্যন্ত সৎ ও ধর্মভীরু মানুষ ছিলেন। মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করা এই মানুষটি জীবনের একপর্যায়ে সিএনজি ও লেগুনা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরে কিডনিতে পাথরের সমস্যা হওয়ায় গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন। তিনি মাঝে মাঝে আমাদের সাথে ঢাকায় থাকতেন এবং সাভারেও আলাদা ভাড়া বাসায় থাকতেন। বাবার চলাফেরায় আমি এবং আমার সৎ ভাই খরচ পাঠাতাম।”
তিনি আরও জানান, তার বাবা তিনটি বিয়ে করেন। তারা মোট ৩ ভাই দুই বোন। তিনি প্রথম স্ত্রীর সন্তান এবং অভিযুক্ত জান্নাতুল জাহান শিফা তৃতীয় স্ত্রীর মেয়ে। তৃতীয় স্ত্রী মারা যাওয়ার পর শিফাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন আব্দুস সাত্তার। কিন্তু শিফার উশৃঙ্খল জীবনযাপন, অশালীন পোশাক ও দোকানে এবং এলাকায় মানুষের সামনে ধূমপান করার মতো আচরণে গ্রামের লোকজন বিরক্ত হয়ে পড়ে। এসব নিয়ে পরিবারের সদস্যরা, এমনকি আমার ৬ চাচাও ক্ষুব্ধ হন বাবার প্রতি। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় ২০২২ সালে শিফা তার বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন, যা হাসিবুর রহমানের ভাষায়, “পুরোটাই মিথ্যা ও সাজানো মামলা।” তিনি আরও বলেন, “আমরা জানতাম বাবার সঙ্গে শিফার কোনো যোগাযোগ নেই। কিন্তু খুনের পর জানতে পারি, শিফা বাবার সাথেই একই বাসায় থাকতেন।”
প্রতিবেশী ইয়াসমিন আক্তার জানান, “শিফারা গত ফেব্রুয়ারিতে এই বাসায় আসে। শিফা অনলাইনে জামাকাপড় বিক্রি করত। ঘটনার আগের দিন ছিল শিফার জন্মদিন, সবাই মিলে তা উদযাপন করে। পরদিনই ঘটে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড।”
৮ মে রাত আনুমানিক ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে আব্দুস সাত্তারকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, হত্যার আগে খাবারের সঙ্গে ২০ টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাকে অচেতন করা হয়। ঘটনার পর শিফা পাশের ভাড়াটিয়া মো. তুহিনের কক্ষে গিয়ে জানান, “আমি আমার বাবাকে মেরে ফেলেছি।” তুহিন আতঙ্কে দরজা না খুলে ৯৯৯-এ কল দেন।
পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আব্দুস সাত্তারের মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং শিফাকে সেখান থেকেই গ্রেপ্তার করে। পরে মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। প্রাথমিক তদন্তে হত্যার পূর্ব পরিকল্পনার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, শিফা হত্যাকাণ্ডের সময় বাসার অন্য দুই রুমমেটকে রুমের বাইরে থেকে আটকিয়ে রাখেন এবং খুনের ভিডিও তাদের কাছে পাঠান। ভিডিও দেখে তারা চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এসে বিষয়টি জানতে পারেন।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবার সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে, যার নম্বর-২৭। বর্তমানে পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে। এ ঘটনায় এলাকায় মৃত আব্দুস সাত্তারের পরিবারসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে। এলাকাবাসী জানান, “আমরা চাই এই হত্যার যথাযথ বিচার হোক। এমন মেয়ে যেন আর কোনো পরিবারে জন্ম না নেয়।”
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। পুলিশ দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে বলে আশাবাদী এলাকাবাসী।
Leave a Reply