
স্টাফ রিপোর্টার: সাভার বাসস্ট্যান্ড ও ওভারব্রিজসহ ফুটপাতের ভাসমান দোকানদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। হকার্স নেতাদের দাবি, এই টাকা পুলিশকে ম্যানেজ করার জন্য নেওয়া হচ্ছে, যাতে উচ্ছেদ অভিযান ঠেকানো যায়। তবে হকারদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—যদি কেউ এ বিষয়ে মুখ খোলে, তবে তার দোকান উচ্ছেদ করে দেওয়া হবে।
স্থানীয় হকারদের অভিযোগ, এই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন সুজা, কালাম ওরফে মোটা কালাম, ইয়ার আলী, সাইদুল, মামুন, জাকির, ফকির চান, টিপু, রশিদসহ আরও কয়েকজন। জানা গেছে, সাভার বাসস্ট্যান্ড ও ওভারব্রিজ এলাকায় প্রায় ১ হাজার ২’শটি দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে, ফলে মোট চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা!
কয়েকজন হকার জানান, “আমরা অনেক কষ্ট করে আয় করি, এত টাকা দেওয়া আমাদের জন্য কঠিন। কিন্তু না দিলে গোপনে হুমকি দেওয়া হয়, এমনকি চাঁদা না দিলে ব্যবসা বন্ধের হুমকিসহ ফুটপাতে বসতে দেওয়া হবে না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার এ প্রতিবেদকে জানান, আমাদেরকে তিনজনকে ওয়ার্নিং দিয়ে গেছে, আমরা কইছি আমরা মার্কেট মালিকদের পক্ষ থেকে বইছি,আমাদেরকে কইছে মার্কেট মালিকদের কইবেন ১০০০ হাজার করে টাকা দিতে হবে নইলে প্রশাসন বসতে দিবে না।
টাকা উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত একজন দাবি করেন, “যার ইচ্ছা সে টাকা দেবে, বাধ্য করা হচ্ছে না। তবে যারা নির্ধারিত টাকা দেবে না, তাদের বিষয়ে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে। ফুটপাতে ব্যবসা করতে হলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলতে হয়। আগেও এমন চলেছে, এখনো একইভাবে চলবে।”
তবে পৌর হকার্স দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে সাইদুল ইসলাম নামে একজন বলেন, আমরা নির্দিষ্ট পরিমাণে কোনো দোকান থেকে টাকা তুলিনি। কোনো দোকান থেকে ১ হাজার, কোনো দোকান থেকে ৫’শ টাকা করে তোলা হয়েছে। তবে ঝামেলা হওয়াতে টাকা হকারদের ফেরত দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত এক ব্যক্তি চাঁদা তোলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আপনি আমার সাথে চলুন, প্রমাণ হবে আমি কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছি কিনা।”
সাধারণ হকারদের দাবি, “টাকা না দিলে রমজান মাসে ফুটপাতে বসতে দেওয়া হবে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ম্যানেজ করতে হলে টাকা দিতেই হবে।” এমনটা বলে তাদের থেকেও টাকা উঠানো হচ্ছে।
এছাড়াও তারা জানান, ” হেমায়েতপুর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। আমাদের বলা হয়েছে, যদি টাকা না দেওয়া হয়, তাহলে শিগগিরই সাভার বাসস্ট্যান্ডেও অভিযান চালানো হবে।”
হকারদের দাবি, প্রশাসন এ বিষয়ে জানলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং, অভিযানের ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
সাধারণ হকাররা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন, যাতে তারা নির্ভয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন এবং রমজান মাসে পরিবার নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
সাভার বাসস্ট্যান্ডে হাকার উচ্ছেদ ঠেকাতে সাংবাদিক ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্য চাঁদা আদায় বিষয়ে সাভার প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল হুদা বলেন, এই রকম তো হওয়ার কথা না। আগে কখনো সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার কথা বলে টাকা নিয়েছে বলে আমার জানা নাই। তবে যদি কোনো সাংবাদিক এধরণের কাজের সাথে জড়িত থাকে এবং তথ্যপ্রমাণ থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি সাওগাতুল আলম বলেন, টাকা উত্তোলনের বিষয়টি আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম। আর আমরা উচ্ছেদ বন্ধ করবো না, উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply