র‍্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ১৬ মাস পর বাড়ি ফিরলো রহমত

Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তৎকালীন আ.লীগ সরকারের বিরুদ্ধে পোস্ট করলে ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট র‍্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় ধামরাইয়ের রহমত উল্লাহকে। তুলে নেওয়ার ১৬ মাস পর তিনি বাড়ি ফিরলেন বলে অভিযোগ তার এবং তার পরিবারের।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলে রাব্বি সেই রহমত উল্লাহকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।

রোববার দুপুরে ধামরাইয়ের নিজ বাড়িতে পৌঁছেন তিনি। ভুক্তভোগী রহমত উল্লাহ ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বড় নালাই গ্রামের মৃত আবদুর রবের ছেলে।

পরিবার জানায়, ফেসবুকে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে পোস্ট করেছিলেন রহমত উল্লাহ। ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত ১২টার দিকে র‍্যাব পরিচয়ে রহমত উল্লাহকে তুলে নেওয়া হয়।

তুলে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে পরিবারকে জানানো হয়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নেওয়া হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরে র‍্যাবের মানিকগঞ্জ ক্যাম্পে যোগাযোগ করা হলে রহমতকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি তারা জানে না বলে দাবি করেন।

তৎকালীন র‍্যাব কর্মকর্তারা দাবি করেন, ধামরাইয়ে এ ধরনের কোনো অভিযান চালানো হয়নি। তারা সাভার নবীনগর র‍্যাব ক্যাম্প বা ঢাকায় র‍্যাবের হেডকোয়ার্টারে খোঁজ নিতে বলেন। এরপর সাভার নবীনগর র‍্যাব-৪, ঢাকা র‍্যাব হেডকোয়ার্টার, ডিবি অফিস, ধামরাই থানায় ঘুরেও রহমত উল্লাহর কোনো খোঁজ মেলেনি।  

রহমত উল্লাহর বড় ভাই ওবায়দুল্লা বলেন, শনিবার দুপুরের দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলে রাব্বি আমাকে কল করেন। তিনি আমার কাছে আমার ভাই রহমত উল্লাহ সম্পর্কে জানতে চান। আমি তাকে আমার ভাইকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানাই। তখন তিনি বলেন, আপনার ভাইকে পাওয়া গেছে, আমাদের কাছে আছেন। আপনারা নিয়ে যান।  

ওবায়দুল্লা আরও বলেন, আমরা জেনেছি, আমার ভাইকে ভারতে পাঠানো হয়েছিল। পাসপোর্ট না থাকায় ভারত প্রশাসন ভাইকে ছয় মাসের জেল দেয়। শুক্রবার আমার ভাইসহ মোট ১৪ জনকে ভারতের বিএসএফ একটি নদী পার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি রেল স্টেশনে ১৪ জন বাংলাদেশি আসেন। সেখান থেকে ১৩ জন তাদের বাড়ি চলে যান। আমার ভাই সেখানেই বসে থাকলে স্থানীয়রা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললে ভাই পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে যান। সেখান থেকে আমাদের জানানো হয়।

রহমত উল্লাহর মা মমতাজ বেগম বলেন, আমার ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার পর অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। র‍্যাব, ডিবি, থানা পুলিশ সব জায়গায় খুঁজেছি। তারা কোন খোঁজ দেয়নি। এমনকি নিখোঁজ ডায়েরি পর্যন্ত নিতে চায়নি থানা পুলিশ। প্রায় দেড়মাস পর নিখোঁজ ডায়েরি নেয়। তখন কিছু বলার ছিল না। শুধু আল্লাহর কাছে বিচার চেয়েছিলাম। আজ আমার বাবা ফিরে এসেছে, আমি আজ অনেক খুশি।

ভুক্তভোগী রহমত উল্লাহ বলেন, র‍্যাব পরিচয়ে আমাকে গাড়িতে তোলা হয়। এর পরপরই কালো কাপড় দিয়ে আমার চোখ বেঁধে ফেলা হয়। বাড়ি থেকে বের করার পর কখন কোথায় নিয়ে যায়, কিছুই বলতে পারব না। আমাকে বাংলাদেশে কয়েক মাস রাখার পর ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই এতদিন ছিলাম। আমার তেমন কিছুই মনে পড়ছে না।  

গোমস্তাপুর থানার পরিদর্শক (ওসি) খায়রুল বাসার বলেন, গত শনিবার রহমত উল্লাহ রহনপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। এরপর রহমত উল্লাহ তার পরিচয় দিয়ে এক বছর চার মাস আগে গুম হওয়ার বিষয়টি জানান। তাকে র‍্যাব পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর একদিন তিনি ঘুম থেকে উঠে দেখেন তিনি ভারতের কোনো এক জায়গায় অবস্থান করছেন। বিনা পাসপোর্টে ভারতে যাওয়ায় তাকে ওই দেশের পুলিশ আটক করে জেল হাজতে পাঠায়।

তিনি বলেন, গত শনিবার রহমত উল্লাহসহ ১৪ জনকে একটি নদী পার করে দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিএসএফ। পরে সে প্রায় সাত কিলোমিটার হেঁটে মানুষদের কাছে জিজ্ঞেস করে রহনপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে এসে আশ্রয় নেন। পরে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি বলেন, রহমত উল্লাহকে দেখে অস্বাভাবিক মনে হয়। তিনি কারও সঙ্গে তেমন কোনো কথা বলেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Wordpress Social Share Plugin powered by Ultimatelysocial
en_USEnglish